মন খারাপের দাওয়াই


প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা ও দুর্বলতা নেই এমন মানুষ খুজে পাওয়া দুস্কর। সময় পেলেই কেউবা প্রকৃতির সাথে নিয়মিত আলিঙ্গন করে ভালবাসা নেয়, কেউবা নিশ্চুপ থেকে সৃষ্টির মহিমা দেখে নীরবে স্রষ্টার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। কর্মব্যস্ত জীবনধারায় মন চাইলেও সামর্থ্য ও সময়ের অপ্রতুলতার কারণে দেশ বিদেশের অপরূপ প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে অনেকেই বঞ্চিত হয়। জাগতিক ও পারিপার্শ্বিক চাপে মানুষের মস্তিষ্ক যখন ঠিকঠাক কাজ করেনা, তখন মানসিক প্রশান্তি ও মস্তিস্কের বিশ্রাম এবং বিনোদনের জন্য প্রকৃতির সান্নিধ্য অপরিহার্য। কারণ প্রকৃতি সকলের জন্য অজাতশ্মশ্রু হিসেবেই বিবেচিত। প্রকৃতি তার আবহ ও সৌন্দর্য দিয়ে সকলকে একইভাবে আপ্যায়ন করে থাকে।

আমাদের অপরূপ বাংলাদেশের প্রকৃতি আসলেই নজরকাড়া। প্রতিটি অঞ্চলের রয়েছে ভিন্নভিন্ন ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান, যেখানে মানুষের নির্ভেজাল হাতের ছোয়া ও চমৎকার কারুকাজের সমন্বয়ে প্রকৃতি পূর্ণ যৌবনা হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছে। কিছুকিছু আপনা থেকেই নজরকাড়াভাবে প্রস্ফুটিত হয়ে মানুষকে মুগ্ধতা দিয়ে যাচ্ছে। তন্মোধ্য সাগর, নদী, পাহাড় পর্বত, লেক ও অসংখ্য বৃক্ষাদি মানুষের দুর্বলতার অন্যতম উপাদান। মুক্তমনেই আলিঙ্গন করতে কার না মনে চায়! জাগতিক সকল প্রাণী মুখ ফিরিয়ে নিলেও প্রকৃতি মানুষের জন্য সারাক্ষণ আশীর্বাদ হিসেবেই প্রতিদান দিয়ে যাচ্ছে। এতটুকু ভেবেই প্রকৃতির প্রতি অধিক যত্নবান হওয়া জরুরী।

নানামুখী কর্মযজ্ঞের ভীড়ে মস্তিষ্ক যখন সানুগ্রহ দেখায় না, ঠিক তখনই আমি প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটে যাই পাহাড়বেষ্টিত কাপ্তাই ও রাঙামাটির বিভিন্ন লেকে।মাঝেমধ্যে বন্ধুদের বিশাল গ্যাং সঙ্গী হয় হৈ-হুল্লোড় করার প্রত্যয়ে। সুবিশাল ও অনন্ত ফটিক জলের লেকে মাঝেমাঝে ভেসে আছে একখণ্ড মাটির টিলা, যেখানে মানুষের হাতের ছোয়ায় ভাসমান বিনোদনের ক্ষুদ্র রাজ্য সৃজন হয়েছে। পাশেই পাহাড়ের কান্নার শুনশান আওয়াজ , পূর্ণিমার আলোকছটায় লেকের জলরাশির আলো আধারের প্রতিবিম্ব যেন এলকোহল ছাড়াই মাদকতার অনুভূতি। কখনো সুসজ্জিত তরীতে বন্ধুরা মিলে লেকের মধ্যেই রাত্রিযাপন। গান,আড্ডা, কবিতার ছন্দে সকলেই নিজকে তুলে ধরে ভোকালের বেসুরা কন্ঠে। তবুও মুগ্ধতায় বোবা হয়ে যাই বয়সের এই ছেলেবেলাসম পাগলামিতে।

আবার যেতে চাই কাপ্তাইয়ের বেরাইন্না লেকের মাঝে রাত্রিযাপন করতে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতে চাই ঃ পৃথিবীর সকল মানুষগুলো যখন স্বার্থের পায়তারায় সম্পর্কছেদে ব্যস্ত, তখনও প্রকৃতি তুমি আমাকে দারুণভাবে কাছে টেনে নাও প্রফুল্লচিত্তে। নিঃস্বার্থ ভালবাসা আর মুগ্ধতা শুধু প্রকৃতিই দিতে পারে, যা মানুষকে বাচিয়ে রাখার অনবরত ও নির্ভেজাল দাওয়াই। অশেষ কৃতজ্ঞতা ও দায়বদ্ধতা প্রকৃতির কাছে।
মন খারাপের দিনে হয়তো স্রষ্টার ধ্যানে একাগ্রচিত্তে মগ্ন হোন, নতুবা প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্যে গমন করুন। মানুষ যা দিতে পারেনা, প্রকৃতি, তা দিয়ে আরও কিছুদিন বেচে থাকার স্বপ্ন দেখায়।

মোস্তাফিজুর রহমান।
গোপালগঞ্জ।
তারিখ ঃ১০/০৬/২০২১ ইং।