দায়বদ্ধতা


আমাদের মতো প্রতাপশালী শারিরীক সক্ষমতা আমাদের মা বাবাদেরও একসময় ছিলো।সন্তানের উজ্জ্বল আগামী গড়ার প্রত্যয়ে সংসারের ঘানি টেনে এখন বয়সের ভারে আক্রান্ত মা বাবা দৈহিক ও মানসিকভাবে রীতিমতো বিপর্যস্ত । শখ, আহলাদ ও অবলম্বন বলতে সন্তানের বাহিরে বিকল্প কিছু চিন্তা করতে পারেনা। সময়মতো প্রয়োজনীয় রসদ ও সেবাশুশ্রূষা পেলেই তারা খুশি। বাড়তি চাহিদা ও চাহিদার বিপরীতে অর্থ খরচ করে ভোগবিলাসের সুযোগ তাদের একবারেই নেই। বয়সের এই স্তরে এসে তাদের প্রয়োজন শুধু দুমুঠো অন্ন, সেবা ও নিরাপত্তা। অন্ন, সেবা ও নিরাপত্তার বিষয়টা আমরা কতটুকু নিশ্চিত করতে পেরেছি, তা কি ভেবে দেখেছি।

বয়স্ক মা বাবা এবং অবুঝ শিশুদের মধ্যে একটি বিষয়ে দারুণ মিল খুজে পাওয়া যায়। তা হলোঃ অবুঝ শিশু পরিস্থিতি ও প্রয়োজন অনুভব না করেই যেমন যখন তখন বিভিন্ন জিনিসের আবদার করে পরিবেশ ভারী করে ফেলে , তেমনি বয়স্ক মা বাবার মনও বিভিন্ন রুচিকর খাবারের বিষয়ে সুপ্ত আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। অর্থাৎ জিহবার অরুচির জন্য তারা ভিন্ন কিছু স্বাদ নিয়ে পাকস্থলীর ক্ষুধামান্দ্য পরিপূর্ণ করতে চায়। যেমন ধরুন, বড় আকারের মাছ, ভাল কিছু ফল অথবা খাবার মেন্যুতে নিত্য দুধকলা বা জিহবার স্বাদের জন্য টক জাতীয় মৌসুমী ফলের আচার ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা দায়িত্ববান কজন সন্তান মা বাবার সাথে একান্তে বসে তাদের সুপ্ত রুচি আর চাহিদার কথা প্রফুল্লচিত্তে জিজ্ঞেস করতে পেরেছি!এ বিষয়ে বিবেকের কাছে জিজ্ঞেস করলে লজ্জা আর অপরাধবোধে নিজকে হয়তো ধিক্কার দেওয়া যাবে কিন্তু মা বাবার আত্নার খোরাক হওয়ার সৌভাগ্য বরন করা সম্ভব হবেনা।

কর্মব্যস্ত জীবনে সকলেরই সময়ের তাড়া রয়েছে সত্য কিন্তু দিনশেষে নীড়ে ফিরে মা বাবার কক্ষে গিয়ে সারাদিনের হালাত, শারীরিক অবস্থা ও বিভিন্ন চাহিদা সম্পর্কে একান্তে হাসিমুখে বাক্য বিনিময় করুন, ঠিক তারা যেমন প্রফুল্লচিত্তে ও নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারবে, তদ্রূপ আপনিও মানসিক তৃপ্তি নিয়ে নিদ্রামগ্ন হওয়ার সৌভাগ্য বরণ করবেন। বয়স্ক মা বাবার সকল ভালবাসা, আশা আকাঙ্খা ও স্বপ্ন আপনাকে ঘিরে। খোকার প্রতি যাদের এত মমতা, সেই খোকা হয়তো মাসেও মা বাবার সাথে একান্তে পাচ মিনিট সান্নিধ্য না নেওয়ার জন্য অযুহাতের পশরা বিছিয়ে রেখেছে। আমরাও একদিন ওনাদের কাতারে পৌছে যাবো, আমরা বয়স্ক মা বাবার প্রতি যতটা দায়িত্বশীল হবো, ঠিক সেটাই শেষান্তে ফেরত পাবো। এটা ভেবে হলেও বয়স্ক মা বাবার প্রতি সার্বিক খেয়াল রাখুন এবং রুটিন করে হলেও মাসে অন্তত একবার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে বাহিরে ঘুরতে গিয়ে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ করে দিন। মনে রাখবেন একটা সময় তাদের মতো আপনিও একা হয়ে যাবেন, তাই নিঃসঙ্গ হওয়ার আগেই প্রফুল্লতার পথ প্রসারিত করুন।

মোস্তাফিজুর রহমান।
গোপালগঞ্জ।
তারিখঃ ০৯/০৬/২০২১ ইং।